বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৪৫ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

নবীজি (সা:) রোজার শেষ ১০দিন যেভাবে ইবাদত করতেন

ইসলামী জীবন, ফাইল ছবি।

ধর্ম ডেস্ক:

পবিত্র রমজানের শ্রেষ্ঠতম সময় হলো শেষ দশ। এ দশ দিনের কোনো এক রাতে লাইলাতুল কদর রয়েছে— যা হাজার রাতের চেয়েও অধিক দামি। আর সে রাতেই কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। আর ইবাদতে নিমগ্নতার মাধ্যমে এ রাত অন্বেষণ করা চাই।

রাসুল (সা.) এ সময়ে ভালোভাবে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। স্ত্রীদের সঙ্গ ত্যাগ করে মসজিদে ইতিকাফে থাকতেন। রাত জেগে এবাদত পালন করতেন। পরিবারের সবাইকেও জাগিয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘রাসুল (সা.) অন্য দিনের তুলনায় রমজানের শেষ দশ দিন বেশি ইবাদতে সচেষ্ট থাকতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯১৩, মুসলিম, হাদিস : ১১৬৯)

তাই রমজানের অন্যান্য দিনগুলোর তুলনায় শেষ দশ দিন বেশি আমল করা চাই। এ কদিন পুণ্যার্জনের সুবর্ণ সুযোগ। জামাতে তারাবির নামাজ আদায়ের পাশাপাশি অন্যান্য আমলও করা চাই। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ইমামের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত নামাজ আদায় করলো, তার জন্য পুরো রাত নামাজ আদায়ের সওয়াব লেখা হবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৮০৬)

রমজানের শেষ দশ দিনের বিশেষ কিছু আমল নিয়ে পাঠকদের জন্য সংক্ষেপে আলোকপাত করা হলো—

লাইলাতুল কদরের সন্ধান
শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে আমলের মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের সন্ধান করা চাই। কারণ, ওই রাত হাজার রাতের চেয়ে বেশি উত্তম। তদুপরি এ রাত সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘আমি বরকতময় রাতে তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি, আমি সতর্ককারী। যে রাতে সব প্রজ্ঞাপূর্ণ কাজের সিদ্ধান্ত হয়।’ (সুরা দুখান, আয়াত : ০৪)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯১৩)লাইলাতুল কদর লাভ করলে নিবিষ্টচিত্তে দোয়া করবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি লাইলাতুল কদর পেলে কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, ‘তুমি বলবে, আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফু উন তুহিব্বুল আফওয়া ফা‘ফু আন্নি’। অর্থ : হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)

রাত জেগে ইবাদত
রমজানের শেষ দশ দিনের রাতে তাহাজ্জুদ, কোরআন তেলওয়াত ও জিকিরসহ অন্যান্য আমলের মাধ্যমে কাটানো চাই। রাসুল (সা.) পুরো রাত জেগে থেকে বিভিন্ন আমলে নিমগ্ন থাকতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রমজানের শেষ দশ দিনে রাসুল (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদতে মগ্ন হতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন ও পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯২০, মুসলিম, হাদিস : ১১৭৪)

অপর হাদিসে আয়েশা (রা.) বর্ণনা বলেন, ‘আমি জানি না রাসুল (সা.) রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পুরো রাতে কোরআন খতম করতেন, পুরো রাত জেগে থাকতেন, পুরো মাস রোজা রাখতেন কিনা।’ (নাসায়ি, হাদিস : ১৬৪১)

ইতিকাফ রাসুল (সা.)-এর সুন্নত
রমজানের শেষ দশ দিনের অন্যতম ইবাদত হলো ইতিকাফ। ইবনে উমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ১১৭১)।

রাসুল (সা.) মদিনার আসার পর থেকে প্রতি বছর তা পালন করেছেন। মৃত্যুর বছর তিনি বিশ দিন ইতিকাফ করেছেন। মদিনায় অবস্থানকালে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতিবছরই ইতিকাফ পালন করেছেন। শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও রমজানে তিনি ইতিকাফ ছাড়েননি।

আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত—

রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন, তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর তিনি ২০ দিন ইতিকাফে কাটান।
(বুখারি, হাদিস : ১৯০৩)
ইতিকাফ হলো ইবাদতের জন্য নিজেকে সব রকম কাজ থেকে মুক্ত করে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে মসজিদে অবস্থান করা। এতে পাপ-পঙ্কিলতার কালিমা থেকে অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। পবিত্র মন নিয়ে বছরের বাকি সময়গুলো কাটানোর রসদ পাওয়া যায়। তাছাড়া লাইলাতুল কদর অন্বেষণের সুযোগও মেলে ইতিকাফের মাধ্যমে।

কোরআন তেলাওয়াত
রমজান কোরআন তেলাওয়াতের মাস। তাই শেষ দশ দিন কাটুক কোরআন তেলওয়াতে। নিমগ্ন চিত্তে ও অত্যন্ত ভাব-গাম্ভীর্য পরিবেশে মনোযোগ দিয়ে কোরআন তেলাওয়াত করা চাই। রাসুল (সা.) প্রতি রমজানে জিবরিল (আ.)-কে পুরো কোরআন শোনাতেন। আর মৃত্যুর বছর তিনি জিবরিলকে দুই বার পুরো কোরআন শুনিয়েছেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৭১১)

এছাড়া রমজানের শেষ দশ দিন ধনীদের জন্য দান-সদকা, অসহায়-দারিদ্রের সহায়তাসহ নানামুখী সহযোগীতাম‚লক কাজে অংশ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এনে দেয়। আল্লাহ আমাদের পুণ্য ও সওয়াবের কাজে বাকি সময়টুকু কাটানোর তাওফিক দান করুন।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION